ডুব

Pedro Novoa

Illustration by Andrea Popyordanova

তুমি ডুব দিলে। তলিয়ে পড়ার সাথে সাথে হিরোমি দিদিমার কথা কানে বাজলো, ‘জলের তলার সেই শ্যাওলাগুচ্ছ নিয়ে ফিরিস কিন্ত ।’ হাতে বানানো ডুবুরি-মুখোশের চারপাশে দিদিমার কথাগুলো যেন ভেসে বেড়াতে লাগলো । আলো । কিংবা আঁশ । যেন মাছের শরীর থেকে ঝরে পড়ছে । তুমি আধুনিক চিকিৎসায় ভরসা করে বাজি রেখেছিলে; তাইতো আগেই হেরে গেছো । আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে তোমার দাদার অ্যানিমিয়া কমেনি কোন মতেই; হয়তো বা সপ্তাহ কয়েকের জন্য গাল দুটোয় একটু গোলাপী আভা হয়েছিল ।

ততদিনে অবশ্য তোমার ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে – জলে ভেসে থাকা, ক্রমশঃ জলের গভীরে ডুব দেওয়া, আর হরেক রকমের ডাক্তারী পরীক্ষা – যেগুলো বলে দিয়েছে যে তুমি সুস্থ; গভীর জলের জন্য তোমার শরীর তৈরী । সবকিছু নিশ্চিত হয়ে তোমাকে ডুব দিতে হবে – আর মনে রাখতে হবে মিসুকি মায়ের মৃত্যুর কারণ । মিসুকি মা বিজ্ঞানকে অবহেলা করে জনশ্রুতিতে আস্থা রাখতেন । এমনকি বাস্তবের থেকেও তাঁর বেশী বিশ্বাস ছিল জনশ্রুতিতে । দিদিমা এখনও বিশ্বাস করে তাঁর মেয়ে মারা যায় নি, সমুদ্র কেবল তাকে কোলে টেনে নিয়েছে মাত্র । দিদিমার এই ভুল ধারণা কেউ দূর করার চেষ্টাও করে নি । তাইতো মিসুকি মায়ের শ্রাদ্ধের দিন কারোও চোখ থেকে একফোঁটা জলও পড়েনি । কেবল বাবা হিদিও পরে বাথরুমে লুকিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন ।

বাবা অবশ্য চিরকালই নিজের খেয়ালে চলেন । আমাদের পায়ের পাতা যখন শক্ত মাটিতে, বাবা কিন্তু ঠিক সেই সময়ে ভেসে চলতেন । যেন পৃথিবী বাম দিকে ঘুরছে, আর তিনি ছুটে চলেছেন ঠিক তার উল্টো দিকে ! সবকিছু জেনেবুঝেই তিনি ইয়োচানের ডাক্তারবাবুকে দিয়ে বলালেন সবাইকে নিয়ে বাড়ি বদলের । চোসিকাতে । এই আশায় যে – সেখানকার শুকনো জলহাওয়া তোমার দাদাকে সুস্থ করে তুলবে ।

বাড়ি বদলের কথা জানতে পেরে দিদিমা প্রথমেই বাবাকে ত্যাজ্যপুত্র করলেন । তারপর নিজের বাক্সপ্যাটরা গুছিয়ে নিয়ে, “আমি বাড়ী ফিরে যাচ্ছি” – বলে তিনি একদিন তাঁর আশি বছরের শরীরটাকে টেনে নিয়ে গেলেন সোজা বিমানবন্দরে । ফিরে গেলেন জাপানে । সেখানে গিয়ে এই জেদী মহিলা জীবন কাটালেন একাই – না বিদ্যুৎ , না সুপার মার্কেট, না ক্রেডিট কার্ড । খাবার বলতে – কেবল মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী আর সেই শ্যাওলাগুচ্ছ, যেগুলো সমুদ্র থেকে তিনি নিজেই বেছে নিয়ে আসতেন । এক বছর পর, তাঁর বক্তব্য ছিল একটাই – “এই প্রশান্ত মহাসাগর পুরোটাই তো আমার !”

চোসিকায় কিছুদিন থাকার পরে বোঝা গেলো সেখানকার জলহাওয়া ইয়োচানের স্বাস্থ্যের পক্ষে সুবিধের নয়, বরং ক্ষতিকারক । আবার ফিরে আসা হলো কাল্লাওতে । তোমাকে দিয়েই এই খবর পাঠানো হল হিরোমি দিদিমাকে । কিন্তু তোমাকে একটু ছলের আশ্রয় নিতে হলো । কিছুদিন আগে একটা ভালো চাকরির সুবাদে তোমার বদলি হয়েছে কুসকোতে; কিন্তু তুমি দিদিমাকে মিথ্যা বললে – তুমি লিমাতে থাকো, বাড়ি থেকে ঘণ্টাখানেক দূরের পথ এই যা । তাই, এরপর কোন পারিবারিক অনুষ্ঠান হলেই তোমাকে কোনো না কোনো বাজে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হতো । তোমার সকল আবোলতাবোল অজুহাত দিদিমা মেনে নিতেন কারন তুমিই হলে তাঁর প্রিয় – যদিও তিনি সে কথা সবার সামনে বলতেন না ।

কিন্তু সেদিন টেলিফোন এলো, ইয়োচানের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক – ডাক্তারেরা জবাব দিয়েছেন । একটুকুও না ভেবে তুমি সঙ্গে সঙ্গে লিমা যাওয়ার প্লেন ধরলে । তারপরে দিলে ডুব । তোমার দাদা তখন মৃত্যুর দোরগোড়ায়, বিজ্ঞান এবং আধুনিক চিকিৎসা সব হার মেনেছে, তাই তোমাদের সবার ভরসা দিদিমার সেই শ্যাওলাগুচ্ছর ওপর ।

ইয়োচানের বয়স যখন আট, তখন দিদিমা ডুব দিয়েছিলেন । ষোল বছরের সময় মা মিসুকি । আর ইয়োচানের বয়স এখন চব্বিশ – মৃতসঞ্জীবনী সংগ্রহ করার দায়িত্ব তোমার – তুমিই তো পরবর্তী প্রজন্ম । তোমার জায়গায় তোমার বৌদি যেতে রাজী হয়েছিল, কিন্তু ওর শিরায় শিরায় তো আর ডুবুরির রক্ত বইছে না ! হাজার বছর ধরে তোমাদের পরিবারের মহিলারা সমুদ্রতলে যাত্রা করে এসেছে, ঝিনুক আর মুক্তোর খোঁজে । যতটা মরিয়া হয়ে বৌদি তোমাকে বারবার ফোন করেছিলো দাদার খবর জানাবার জন্য, ঠিক ততোটাই মরিয়া হয়ে বউদি এই মুহূর্তে তোমার কোমরে বাঁধা দড়ি শক্ত করে ধরে আছে । সমুদ্রের নিচে তুমি, আর সমুদ্রের উপর নৌকোতে তোমার বৌদি ভয়ে, কষ্টে—ঘামছে, ¬হাঁপাচ্ছে—তোমার ডুবন্ত শরীর তো খানিকটা তাঁর শরীরও বটে !

তুমি তখন চলেছ অন্য এক জগতে, সমুদ্রগর্ভে – নিকষকালো দুধসাগর ভেদ করে, ডুবসাঁতারের বাতাসবাহী নলটি শিঙার মতন অদ্ভুতভাবে বেরিয়ে আছে তোমার মুখ থেকে । আর একটা হ্যারিকেনের অস্বস্তিকর আলো, যতটুকু দরকার, ঠিক ততটুকুই । তোমাকে পথ দেখানোর জন্য । তার মৃদু আলোয় – সামনের যাত্রা যেন বাইরের রাত থেকে আরও অন্ধকার আরও গভীর । আর ঠিক এরই মধ্যে, তুমি প্রায় নগ্ন – খোলা বুকে এগিয়ে চললে অনন্তের দিকে – পাখনা ছাড়া, ডুবুরি পোশাক ছাড়া, কেবল ফিনফিনে একটা অন্তর্বাস পরে – ফিউকাস-গোত্রীয় দুর্লভ বাদামী-হলুদ শ্যাওলার খোঁজে । শরীর আর মন তাজা রাখতে ঠিক এই ধরনের শ্যাওলা খেতেন তোমার পূর্বপুরুষ আমাস-মহিলারা – মুক্তোর খোঁজে সমুদ্র গভীরে যাবার ঠিক আগের মুহূর্তে । কাঁচা । এবং চিবিয়ে । নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে । তবে একটাই দুর্ভাগ্য – ফিউকাস-গোত্রীয় এই শ্যাওলা বাসা বানায় প্রায় সমুদ্রতলে; দুরূহ খাড়া পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে। তিরিশ মিটার ডুব দিয়ে তুমি বুঝতে পারছ – গভীর সমুদ্রের পাথর কি জটিল আর অমসৃণ !

গুচ্ছ গুচ্ছ ঝিনুকের খোল এবং প্ল্যাঙ্কটন ঝাঁকের মধ্য দিয়ে সাবধানে তুমি পৌঁছে গেছো ফিউকাস শ্যাওলাদলের কাছাকাছি; তাদের ভাসমান ডগাগুলো এখন তোমার আঙ্গুল এবং হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে, মাঝেমাঝে স্পর্শ করছে তোমার খোলা বুক । তুমি টেনে ছিঁড়ে শ্যাওলার গুচ্ছ জোগাড় করতে শুরু করলে, জালি দিয়ে তৈরি পোটলা ভরতি করে তোমার মনে হল – যাক অর্ধেক যুদ্ধ তো জয় হলো . . .

শ্বাস না নিয়ে ঠিক দেড় মিনিট –জলের গভীরে তা অন্তহীন । দু’ একবার মনে হয়েছিল যে তোমার জিভ ফুলছে, জড়িয়ে যাচ্ছে, পিছন দিকে গুটিয়ে যাচ্ছে – ঠিক এই ভাবেই তোমার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল । তিনি গভীর জলের টান অনুমান করতে ভুল করেছিলেন । এই মুহূর্তে একই ভাবে তোমারও মৃত্যু হতে পারে । তাই ফেরার পথে তুমি একটু বেশী সাবধান, দরকারের বেশী নড়াচড়া করছো না – যাতে তোমার শরীরে কারবন-ডাই-অক্সাইড যেন জমে না যায় । তোমার হাত থাইয়ের উপর রেখে, জলের মধ্যে এমনভাবে পা ছুঁড়লে, যাতে অক্ষত শরীরে ভেসে উঠতে পারো – আর ঠিক তখনই তোমার গোড়ালি দুটো জড়িয়ে গেলো দড়ির গিঁটে । তুমি হেরে গেলে . . .

“সমুদ্রকে ভয় পেও না” – হিরোমি দিদিমা বলতেন, “যাকে মনের গভীরে ভালোবাসো, তাঁর জন্য লড়াই করতে আবার ভয় কিসের ?” তোমার হাতেগড়া ডুবুরি-মুখোশের চারিপাশে যেটুকু অবশিষ্ট আলো, এক দল মাছ এসে তাও যেন গিলে ফেললো । উপরে নিশ্চয় বৌদি দড়ি টানাটানি করতে করতে হাঁফিয়ে পরেছে – আর, তারপর দড়ির ছেঁড়া অংশ দেখে খুব ভয় পেয়েছে ।

তোমার ফুসফুসের মধ্যে, শ্বাসপর্দার ওপর অদৃশ্য কেউ যেন একের পর এক ঘুঁষি মেরে চলেছে । কি রকম একটা ঝিমঝিম, একটা ঘুম ঘুম ভাব তোমাকে এই বাস্তব থেকে আরো দূরে নিয়ে যেতে চাইছে । কিন্ত তোমার সেখানে যাওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই, তাই তুমি কোন রকমে দড়ির গিঁঠ ছাড়িয়ে উপরে উঠে আসার চেষ্টা করছো । আর কিছুক্ষণ পরে, হয়তো বা সহজাত প্রবৃত্তিতে, তুমি উপরে উঠে এলে । সেই ফিরে আসার পথ তুমি অতিক্রম করলে ধীরে ধীরে । আর মাত্র পাঁচ মিটার বাকি, নৌকোর তলাটি আস্তে আস্তে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে । আর তখনই তুমি দেখতে পেলে, নৌকোর ঠিক পাশেই - জলে ছোপ ছোপ তেলের মত ভাসছে তোমার জীবনের কিছু কিছু টুকরো – খুঁজে পেলে হিদিও বাবার ফ্যাকাশে গাল, ঠিক একই রকম ইয়োচানের গাল, মায়ের প্রথম মুক্তো খুঁজে পাওয়ার হাসি, হিরোমি দিদিমার দৃঢ় কণ্ঠস্বর – সব ভুল ঠিক করার। ঠিক সেই মুহূর্তে তোমার হাত শক্ত হয়ে এলো, তোমার জিভ যেন একটি আস্ত অজগর, তোমার তালুর কাছে ঘুমাচ্ছে শ্বাসনালী বন্ধ করে । চারপাশের আলো অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে, একটু বেশী সাদা, একটু বেশীই ভয়ঙ্কর । আর তুমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করলে । সেই স্বপ্নের মধ্যে তোমার পা থেকে পাখনা গজাচ্ছে, সেই স্বপ্নের মধ্যে – অক্সিজেন কেবলই অন্ধবিশ্বাস ।

Read the original in Spanish

Read the Albanian translation

Read the Chinese, Traditional translation

Read the Czech translation

Read the Dutch translation

Read the English translation

Read the French translation

Read the Greek translation

Read the Japanese translation

Read the Kannada translation

Read the Korean translation

Read the Persian translation

Read the Portuguese translation

Read the Slovak translation

Read the Tamil translation

Listen to the author read the text in the Spanish:

Winner of the “Story of 1000 Words” contest sponsored by Peru’s Caretas magazine, Pedro Novoa’s “The Dive” does not fit neatly into any genre. At 997 words, it lives on the margin of the cuento (short story), the cuento breve (short short story), and the microcuento (micro-story).

I posed the question of genre to the author in an email: “There is a very thin line between cuento and cuento breve that makes a sharp delineation difficult. I use devices common to the cuento, but also poetic devices like metaphor, similes, or symbols, which allow me to save space.” “Ultimately,” he concluded, “I think it’s a cuento breve because, unlike the microcuento, it forces the reader to take a breath, a brief but necessary pause before resuming the story.”

Written in the second-person tú, “The Dive,” whose first line is “Te sumerges” (You dive), is reminiscent of Carlos Fuentes’ Aura, whose opening line, “Lees ese anuncio” (You read the advertisement), has become of the most memorable, if not haunting lines in Spanish literature. This comparison is appropriate, however, for another reason: the novella, like the cuento breve, is a genre that demands linguistic economy.

As a translator, my immediate task was to honor the 1000-word limit. This meant, for example, avoiding periphrasis wherever possible and applying a scalpel to remove any excess.

Another consideration was the translation of the title, “Inmersión,” a polysemic noun, meaning at once “immersion,” “diving,” and even “under-water fishing.” This polysemy, of course, is intentional. No single English word, however, contains the same semantic values. In the end, I chose “The Dive” to echo my translation of the story’s first line.

In a final email, Novoa confessed that the story is based on his own experience of losing consciousness while taking diving lessons. “But,” he wrote, “following Vargas Llosa’s recommendation to not ‘parasitize’ our lives, I decided to use the experience in a way that demanded that I do research. That’s how I arrived at the pearl divers.” My translation, then, required that I also carry out research on Japan’s ama, which, like Novoa, I opted to leave in Japanese.

Novoa ended his email confession, saying, “Writing this story was part of an exorcism,” adding, “I wanted those demons that I had immersed to be known by as many people as possible.”

Consider, then, this translation an effort to help Novoa exorcize those demons.

Pedro Novoa (b. 1974, Lima) has won numerous literary prizes in his native Peru, including the Premio Nacional de Dramaturgia, in 2004, and the Premio Internacional de Cuento Corto Dante Alighieri for short stories. He has published the novel Seis metros de soga (Ediciones Altazor), which was awarded the Premio Nacional Horacio 2010 in the short novel category, and the novel Maestra vida (Alfaguara), winner of the Premio Internacional Mario Vargas Llosa. He has contributed to anthologies published in Chile, Argentina, Colombia, Spain, and Peru. His story “Inmersión,” which appears here as “The Dive,” recently won first prize in the XXVII Edición del Concurso de las 1000 Palabras, organized by the magazine Caretas. He is a professor at the Universidad César Vallejo.

George Henson is a translator of contemporary Latin American and Spanish prose. He has translated works by many notable writers, including Elena Poniatowska, Andrés Neuman, Claudia Salazar, Raquel Castro, Leonardo Fuentes, and Luis Jorge Boone. His translations have appeared variously in Words Without Borders, Buenos Aires Review, BOMB, Literal, and The Literary Review. His translations of Alberto Chimal have appeared in The Kenyon Review, Flash Fiction International, and World Literature Today. His book-length translations include Sergio Pitol's The Art of Flight and The Journey, both with Deep Vellum Publishing. George is a member of the Spanish faculty at the University of Illinois Urbana-Champaign, where he is affiliated with the Center for Translation Studies. He holds a Ph.D. from the University of Texas at Dallas.

Alketa Halilaj (1990) is a young journalist and translator from Albania. She started her career in 2013 by co-funding and working as the Editor-in-Chief of Pa Fokus online magazine (Albania). Currently, she manages some online platforms on investments and entrepreneurship. She is also translating two books on Semiotics. During her short but intensive career, Alketa has been part of many translation projects—mainly in the literature field. She is very passionate about literature, semiotics and languages as she can speak Albanian, English, Italian, Spanish and German. During her free time, she takes online courses and reads literature blogs.

Eunice Kim is a schoolteacher and novelist who received her MFA from Otis College of Art and Design and her BA from Amherst College. Previously, she has been published in Lumen and Canyon Voices. In her free time, she advocates a sustainable lifestyle that seeks beauty in all its material and spiritual manifestations. Her fiction and nonfiction works are inspired by fairytales, meditation practices, and improvised music, and revolve around place, object, symmetry, and abstraction. Originally from New York, she is currently living in Los Angeles with her pet turtle Soren.

Fabrizio Mas was born in Lima, Peru. He has had instruction in different forms of art, but he is mainly a writer and a translator. As a writer, he has been published a number of times in literary magazines like Os Fazedores de Letras (Faculty of Letters of the University of Lisbon, Portugal). His most recent work is included in an anthology of young Latin American writers called Apuntes Sudacas (Ayni—Cooperativa Editorial, 2016), which will be published this year in Barcelona, Spain. He is currently working on a book of short stories and on a translation, from Portuguese into Spanish, of a Brazilian writer and composer. He is also part of an art collective in Peru called Sapos y Culebras. Besides his literary work, he has also worked as a scriptwriter for shortfilms in Peru, combining his work as a writer with his interest in cinema.

Sohini Basak has poems and short stories in the Missing Slate, Ambit, Lighthouse, Paris Lit Up, Helter Skelter, Emma Press and Poetrywala anthologies, and elsewhere. She won second prize at the inaugural RædLeaf India Poetry Prize in 2013 and was shortlisted for the Melita Hume and the Jane Martin poetry prizes in 2014. She studied literature and creative writing at the universities of Delhi, Warwick, and East Anglia, where she was awarded the Malcolm Bradbury continuation grant for poetry. She is one of the social media managers for Asymptote and works as an editor in Delhi.

Sylva Ficová is a freelance translator, editor, lecturer, and photographer. Professionally, she specializes in subtitling, academic translation and localization, but she has also translated more than 15 book titles, including The Marriage of Heaven and Hell by William Blake, a novel by Patrick McCabe, a comic by Alison Bechdel and books on literary theory by Northrop Frye. She lives in Brno, Czech Republic.

Avgi Daferera is a translator to/from English from/to Greek, and occasionally from Spanish. She was born in South Africa and raised in Greece. She studied English Literature at the Aristotle University of Thessaloniki, Greece, and holds an MA in Writing from the University of Warwick, UK, and an MA in Literary Translation from the University of East Anglia, UK. Apart from Greece and the UK Avgi has also lived in Spain and Belgium. She has worked as a freelance translator for over five years. Her translations have been published in various print and online magazines. Avgi was the Greek mentee during the first year of the British Centre for Literary Translation Mentorship Programme in 2012. She is currently working as a Children`s Rights Assistant at the Ersilia Literary Agency in Athens.

Rosy D'Souza is a poet, translator, teacher and a development professional and cofounder of Sunoh, an online radio station. In the past she has taught English literature to graduate students and has worked with internationally renowned NGOs to improve the quality of teaching-learning in primary schools in rural India. Currently, she has taken a sabbatical to be with her baby girl, Misuni. Her poetry has won many prizes and her anthology Manna Bisupu (Warmth of the Soil) is critically acclaimed. Her translation of H. Y. Sharada Prasad's Quit India Prison Dairy, Arivina Adumbola (A Playground of Wisdom) is a vital historic document of India's freedom struggle. Her translation of Jeremy Seabrook's essays into Kannada, Swargakke Moore Maili (Only Three Miles to Paradise) is forthcoming.

N. Kalyan Raman is a translator of contemporary fiction and poetry in Tamil, a major language of south India, into English. He has so far published nine volumes of Tamil fiction in translation, including Mole! (2004), Manasarovar (2010), The Arena (2013), Farewell, Mahatma (2014), Still Bleeding from the Wound (2016) and The Ghosts of Meenambakkam (2016). His poetry translations have appeared in several anthologies of literature in Indian languages and in journals such as Poetry Internetional, Circumference, Indian Literature, Caravan and The Little Magazine, among others. He has just completed translation of two novels by Poomani, the distinguished chronicler of subaltern lives, and is currently translating a collection of short stories by Salma. He has translated relatively little from English to Tamil, his mother tongue, but would like to do a lot more in future. In 2014, he published a Tamil translation of Grace Paley’s story, “The Long Distance Runner.” “The Dive” is only his second attempt in this direction.

Aňa Ostrihoňová studied English, American and French language and literature at Charles University in Prague and has a PhD in translating studies from Constantine the Philosopher University in Nitra. After living abroad for several years, including working as a translator for the European Commission and the European Parliament, she returned to Slovakia in 2011 and founded her own publishing house, INAQUE. She writes essays and book reviews and translates fiction and non-fiction from English, French and German.

Francis Li Zhuoxiong is a contributing editor at Asymptote. A critically acclaimed and platinum-record lyricist, he was the subject of an interview in the Jan 2011 issue of Asymptote. Songs he has written include the 2012 Olympics song for China (sponsored by Coca Cola), the Chinese version of the 2010 FIFA World Cup song "Wavin' Flag," the theme song to the movies "Red Cliff I & II" (directed by John Woo), and the Karen Mok songs "愛" and "不見不散,“ which won him Golden Melody Awards for Best Lyrics in 2003 and 2015 respectively. Click here for his website.


Lectures d'ailleurs is an alternative Spanish/French—French/Spanish literary translation initiative and publisher conceived and run by Professor Caroline Lepage of the University of Paris Ouest-Nanterre-La-Défense in France. With no commercial aim and comprised of both high school and university students and professors as well as professional translators—all of whom are passionate about literature and translation—this project has as its aim the diffusion of short literary forms. Only a few stories or micro-stories from a given author are published in order to give greater visibility to as many authors as possible. Stories do not need to be previously published or fit any thematic criteria; all that matters is that they are untranslated. The members of the team then read the stories and proceed to select some of them. The translation is then produced collaboratively in different workshops. Lectures d'ailleurs was created on November 4, 2012. It has produced 32 anthologies organized by country or theme and in the process translated more than 700 authors.

Poupeh Missaghi, Asymptote’s Editor-at-Large for Iran, has a PhD in English, Creative Writing, from University of Denver and an MA in Translation Studies. She works and has published as a writer, translator, editor, and educator.

Nazanin Mehrad has a PhD in Hispanic literature from the Universidad Autonoma de Madrid. She has worked as a translator and interpreter for many years and has teaching experience at the university level as well.

Sim Yee Chiang is a contributing editor at Asymptote. He was born in Singapore, received an undergraduate education and a master's in English from Stanford University, and researched issues of English-Japanese and Japanese-English literary translation under the auspices of the University of Tokyo, where, seduced by the praxis itself, he now hopes to contribute to the exponentially growing mass that is world literature.

Sayuri Okamoto is a contributing editor at Asymptote. She holds degrees in art history and Japanese literature and works as a translator, writer, and curator. Born and raised in Shizuoka, Japan, she is currently living and working in London (UK) and Padua (Italy). In 2014, she received a PEN/Heim Translation Fund grant for her translation of Gozo Yoshimasu's "post-3.11" poetry series Dear Monster.

Machiel van Veen developed a liking for languages while working as a conductor on Dutch Railways, where he learned English, French, and German. He has translated John Barth’s The Sotweed Factor into Dutch as well as several other books from English and Scottish English. Based in Amsterdam, he also specializes in decoding works written using the Fractur-Alphabet.